ফিরে যাবো
অতঃপর আমি তোমার কাছেই
ফিরে যাবো-
আরশের নিচে বয়ে চলা সেই
দুধ-সাগরের
তীরে যাবো ॥
‘প্রশান্তপ্রাণ! ফিরেএসো’ বলে
ডাকবে যখন তুমি
জানি না তখন কতোটা আবেগে
দুলবে হৃদয় ভূমি।
শুধু জানি, আমি আমার আপন
নীড়ে যাবো-
ফিরে যাবো ॥
তোমার দুয়ারে ফিরবো বলেই
জেগে আছি-
সিজদা শেফালি মায়াবতী ঘ্রাণে
টেনে নিয়ে যায়
কাছাকাছি!
অনন্ত প্রেম নেমে আসে যদি,
জাগবে সুরের ধারা
সহসা দূরের সুরভী আমাকে
করবে আপন হারা!
হেসে হেসে আমি সবুজ পাখির
ভিড়ে যাবো-
ফিরে যাবো ॥
চাষ হবে গোলাপের ঘ্রাণ
রাইয়্যান পার হয়ে পৃথিবীতে যদি
নেমে আসে মধু আর মদিরার নদী
লাবানের ঢেউ আসে, পানির নহর
পথে নামে মালায়িকা, নূরের বহর;
এ পৃথিবী পুনরায় ফিরে পাবে প্রাণ॥
সবুজের গালিচায় জমে আছে পাপ
বাতাসের মুখে মুখে কত অভিশাপ!
মানুষের সাদা হাত হয়ে আছে লাল
কররেখা জুড়ে তার শোণিতের ছাপ!
রহমতে ভিজে যদি ভোগের শহর;
ঘরে ঘরে চাষ হবে গোলাপের ঘ্রাণ॥
আদমের এ ভূমিতে জিবরিল এসে
ডানাগুলি মেলে দেয় যদি ভালোবেসে
মালিকের আদেশেই জানায় সালাম
অনায়াসে মুছে যাবে দুখের কালাম!
‘আশরাফ’হারিয়েছে পরিচয় তার
ভুল পথে ফেরি করে শুধু হাহাকার।
নিজ হাতে বুনেছিল ফাসাদের জাল,
সুদিনের সৌরভ সে-কিপাবে আর!
হয়তো বা ফিরে যাবে ভয়াল কহর;
অবিরল নামে যদি আসমানী ত্রাণ॥
নাফস
প্রতিদিন আমি পাঠ করে যাই
নাফসের ইতিহাস
আমার ভেতরে বহু রূপ ধরে
অবিরাম যার বাস।
আমি চাই শুধু- ‘মুতমাইন্না’
প্রশান্ত রূপ তার
ফেরদাউসের মানহালে ধোয়া
সুরভিত উপহার॥
‘আমমারা’ ডাকে অন্ধকারেই
লালসায় ভেজাবন্ধ-দ্বারেই।
আর চায় আমি আজীবন যেন
হয়ে থাকিতার দাস-
আমার ভেতরে বহু রূপ ধরে
অবিরাম যার বাস।
তবুও ‘রহীম ’ভালোবাসে বলে
ফিরে আসি বারবার॥
বিদায়ের দিনে রব যেন বলে:
‘তোর প্রতিআমি রাজি-
প্রশান্ত প্রাণ! ফিরে আয় তুই
আমার দুয়ারে আজই!’
‘লাওয়ামা’শুধু লজ্জিত হয়-
ভুলে ভুলে যদি সজ্জিত রয়।
আলো-আঁধারের দ্বন্দ্বে পড়েই
অনুতাপ করে চাষ-
আমার ভেতরে বহু রূপ ধরে
অবিরাম যার বাস।
সালীম হৃদয় খুঁজে ফিরি তাই,
পুড়ে হই ছারখার॥
উড়ালপাখি
হেরার পথের স্বপ্নতোরণ আঁকতে বড় ইচ্ছে হয়-
দু’চোখে তার ধুলির সুরমা মাখতে বড় ইচ্ছে হয়॥
প্রিয় নবীর প্রিয় শহর-
যদিও সে ধূসর মরু
তবুও তার বুকে যেন ভালোবাসার হাজার নহর।
সেই নহরের স্রোতে ভেসে থাকতে বড় ইচ্ছে হয়॥
প্রথম যেদিন শুনেছিলাম, ‘মুহাম্মদ’ এই মধু নাম
মন হলো এক উড়ালপাখি খুঁজতে শুধু তাঁরই গ্রাম!
যে পথে তাঁর পড়তো চরণ-
হয়তো সে পথ মুছে গেছে,
তবু অযুত হৃদয় থেকে মুছেনি তার স্মৃতির স্মরণ।
সেই স্মরণের নিশান ধরে রাখতে বড় ইচ্ছে হয়॥
শীতল জায়নামাজ
যেখানে আকাশ সাগরের সাথে
মিলেমিশে একাকার
যেখানে পাহাড় ঝরনার স্রোতে
ধুয়ে নেয় দেহ তার;
সেখানে বেঁধেছি ঘর-
যত দূরে যাই, তার কাছে আমি
রেখে যাই অন্তর॥
সবুজ যেখানে আলপনা আঁকে
বনানীর কোল ছুঁয়ে
বৃক্ষের ছায়া, মায়া হয়ে থাকে
পথের ওপরে শুয়ে-
সাহসের বীজ রুয়ে
আমি তো সেখানে নির্ভয়ে চলি
নিত্য-নিরন্তর॥
এ আমার দেশ, এ আমার প্রেম
শীতল জায়নামাজ
তাকে ছাড়া মন সুখের ঠিকানা
কোথাও পায় না আজ!
কোকিল যেখানে ফাল্গুণী সুরে
আবেগের ঢেউ আনে
পুষ্পের প্রীতি, স্মৃতি হয়ে হাসে
সকল বিরহী প্রাণে-
মহুয়ার মধু-ঘ্রাণে
আমি তো সেখানে সংগীতে ভাসি
রাত্রি-দিবসভর॥
সংসার
দুই জীবনের মিলন-মোহনা
নাম তার সংসার
কখনো সবুজ, কখনো হলুদ
শতরূপা রং তার।
সংসার! সংসার॥
সংসার হলো নতুন জীবন
প্রাণের ভেতরে প্রাণ-
কথার পেছনে কথার গল্প,
স্মৃতির শরীরে ঘ্রাণ!
স্বপ্নের মতো সন্ধ্যামালতী
রজনীগন্ধা ফুল-
সংসার হলো কিছুটা সত্য
এবং কিছুটা ভুল!
সংসার! সংসার!
হৃদয়েরতারে হাসি-আনন্দ
বেদনার ঝংকার॥
গংসার হলো বুকের গহীনে
লুকানো হাজার ঢেউ
নিজের সাথেই নিজের যুদ্ধ
জানে না অন্য কেউ।
চোখের তারায় স্বপ্ন তারার
উজ্জ্বল অভিনয়-
সংসার হলো কিছুটা সাহস
এবং কিছুটা ভয়।
সংসার! সংসার!
টকটকে লাল আনারের রস,
ঝাঁজ কাঁচা লংকার॥
হৃদয়
হৃদয় তো ফেরে হৃদয়ের কাছে
যেখানে প্রেমের মায়াদ্বীপ আছে,
আছে মমতার ছন্দহার-
হৃদয়ের আলো জীবনকে ধুয়ে
দূর করে সব অন্ধকার॥
গোলাপের রূপে রঙ লাগে প্রাণে,
সৌরভে বুক ভরে যায়-
রাতের কুসুম ভোর না হতেই
ঝরে যায়!
হৃদয়ের ফুল ঝরে না কখনো,
চির পরিমল গন্ধ তার॥
স্রোতের আবেগে যে যুবতী নদী
সাগরের বুকে নেমে যায়-
একদিন সে-ও নীরবেই পথে
থেমে যায়!
হৃদয়ের নদী মরেনা কখনো,
অনায়াসে খোলে বন্ধ-দ্বার॥
ব্যথার নোঙর
বানের পানিতে ডুবেছে সবুজ
ডুবেছে শ্যামল মাঠ
অপমানে যেন লুকিয়েছে মুখ
কাজল দিঘীর ঘাট-
তুমিও কি তবে মুখ লুকাবে?
বন্ধু!!
হাঁসের মতোই ভাসছে মানুষ,
দিনরাত শুধু ভাসছে-
স্রোতের সাথেই চারদিক হতে
দুখের খবর আসছে!
আসে না কেবল স্বপ্নের চালা,
ভাঙা দরোজার কাঠ-
কীভাবে তাদের ক্ষত শুকাবে?
বন্ধু!!
জীবনের সাথে খেলছে জীবন,
অবিরাম শুধু খেলছে
বানভাসি মন জলের অতলে
ব্যথার নোঙর ফেলছে।
প্রকৃতিতে লেখা দিনলিপি তার
প্রকৃতিই করে পাঠ-
তুমিকি তাদের ঋণ চুকাবে?
বন্ধু!!
ফুল-কুড়ানি মেয়ে
কোন্ বনে তুই দুঃখ রাখিস,‘ফুল-কুড়ানি মেয়ে’!
শীতল ছোঁয়ায় গাঁথিস মালা, কার ছায়াপথ চেয়ে॥
আঙুল-ডগায় রূপালি সুঁই
চেপে ধরে, কেন যে তুই-
সুতোয় জড়াস শিউলি-বকুল, অশ্রুধারায় নেয়ে॥
পাপড়ি-রাঙা হাতের রেখায় নাজানা কোন্ ভাষা,
করুণ চোখে নীরব রোদন,কোথায় ভালোবাসা!
সবারে দিস্ ফুলেল প্রীতি
তবুও তোর মোহন স্মৃতি-
কেউ রাখে না বুকের ঘরে,আনমনে গান গেয়ে॥
পাললিক প্রেম
এ নদীকে আমি বহুদিন ধরে চিনি,
এ নদী আমাকে বহুদিন ধরে চিনে-
তার সাথে যেন বাঁধা পড়ে আছি
পাললিক প্রেমে, মধুর-বিধুর ঋণে॥
এ নদীর সুরে গেয়েছি অনেক গান
মিলনে-বিরহে আবেগ পেয়েছে প্রাণ।
যত দেখি তারে তত ভালো লাগে
পূর্ণিমা রাতে অথবা বাদল-দিনে॥
হৃদয়ের যত না বলা কথার ধ্বনি,
বুকে চেপে রাখা অবিরল ক্রন্দন-
স্রোতের শরীরে ভাসিয়েছি নির্জনে
বলেছি,সাগরে পৌঁছিয়ে দিও মন!
এ নদীর বুকে কত যে স্মৃতির ঢেউ
কত হাহাকার বলতে পারে না কেউ।
তার ভাষা কেউ বুঝতে পারে না
ঘরহীন কোনো দূরের পথিক বিনে॥
বিষয়সমূহঃ
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ